পর্ব ৯
মৃদুল স্যার পাগলের মতো খুজছিলেন রাতুল নামের লোকটি কে।যখন অন্য একটি লোক বললেন রাতুল নামের মানুষ টি মৃত তখন মৃদুল স্যার সেটা মেনে নিতে পারেন নি।মৃদুল স্যার চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠে বলেন না এটা হতে পারে না রাতুল মরতে পারে না।রাতুল মরলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না।মৃদুল স্যারের খুব চেনা কেউ ছিলো ওই রাতুল নামের মানুষ টা।আমি বার বার প্রশ্ন করছিলাম স্যার কি হয়েছে খুলে বলুন।মৃদুল স্যার আমার কথার কোনো উত্তর দিলেন না।বরং আমাকে বললেন ও মরে নি ও মরতে পারে না।ও এতক্ষণ আমার সাথেই ছিলো।অনেক দিন পর আমি রাতুল কে খুজে পেয়েছি।
মৃদুল এর পিএ এর মুখের কথা শুনে অবাক হয়ে যায় তাসনিম।কি এমন রিলেশন এই রাতুল এর সাথে মৃদুল এর।আর এর মাঝে মায়া ও বা কিভাবে জড়িত।
মৃদুল এর পিএ আবার ও বলতে শুরু করে ম্যাডাম ওই লোকটা আমাদের পালাতে বলে দ্রুত ওখান থেকে চলে যায়।আমরাও ওই লোকটার পিছু পিছু যায় কারণ আমরা ও জানতাম কিছু কিছু না কিছু জানতে পারবো ওদের ওখান থেকে।লোকটা দেখলাম অত রাতে একটা বড় বাগানে ঢুকছে।নিকশ কালো অন্ধকার ছাড়া ওখানে কিছুই দেখা যাচ্ছে না।লোকটা শুধু পালাও বলছিলো।আমাদের হাতে ফোন ছিলো ফোনের আলো জ্বেলে উনার পিছ পিছ যায়।এমন সময় বড় একটা গাছের ডাল আমার সামনে ভেঙে পড়ে।আমি মৃদুল স্যার কে বলি স্যার এত গহীন জঙ্গলে প্রবেশ করবেন না।আমরা বেঁচে ফিরবো না।কিন্ত মৃদুল স্যার বলেন আমি মরলেও কষ্ট নেই তুমি তাসনিম কে জানিয়ে দিও আমি এখানে এসে মারা গিয়েছি।
ছোট্ট একটা সরু রাস্তা দিয়ে আমরা যাচ্ছিলাম।এমন সময় দেখি ওই লোকটা একটা কুড়ের মাঝে প্রবেশ করে।কুড়ের মাঝে একটা লন্ঠন এর আলো জ্বলছে।সেখানে আরেক টি মহিলা।মহিলা টা অপর্ণা নামে কারো নাম ধরে ধরে ডাকছিলো আর কাঁদছিলো।ওই লোকটা ওই মহিলা কে বলেন অপর্না কাউকে ছাড়বে না।ও এসে গিয়েছে।তোমার আমার এই কষ্ট থেকে ও মুক্তি দিবে তুমি কেঁদো না।মৃদুল স্যার সব জানার জন্য কুড়ের ভিতরে প্রবেশ এর চেষ্টা করেন কিন্তু ঠিক সেই মুহুর্তে মৃদুল স্যার এর পেছনে কেউ হাত রাখেন।মৃদুল স্যার তাকিয়ে দেখে চমকে যান কারণ ওটা রাতুল নামের দেই লোকটা ছিলো।
লোকটা মুচকি হেসে মৃদুল স্যার কে বলেন সেদিন যদি তুমি এমন না করতে আজ আমি মরতাম না।আমিও তোমাদের সাথে হাসি খুশি ভাবে বেঁচে থাকতে পারতাম।আমার মৃত্যুর কারণ তুমি।তুমি আমাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছো।না না আমি অভিমানে তোমার দোষ দিচ্ছি।এটা আমার কপালে ছিলো।এখান থেকে চলে যাও।মায়া কাউকে ছাড়বে না।ও আরো ভয়ংকর হয়ে উঠেছে।
আমার সমস্ত শরীর হীম আসে আসে ম্যাডাম একটা মৃত মানুষ দাঁড়িয়ে কথা বলছে। যে কোনো মানুষের ই স্বাভাবিক থাকার কথা নয়।অন্ধকারে সাদা ধবধবে পাঞ্জাবী পরা ছিলো সেই রাতুলের।
মৃদুল স্যার রাতুল কে বলেন তুই আমাকে মেরে ফেল তবুও আমার সাথে কথা বল।আমার সাথে একটু সাইডে চল রাতুল আমার কিছু জানার আছে।তারপর উনরা দুজনে আবার নির্জনে গিয়ে কি কথা বললেন জানিনা।
ম্যাম আমি সেদিন থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছি আমি অত রাতে খেয়াল করে দেখি যে গাছের ডালে খানিক টা লাল টকটকে লিপিস্টিক পরে সাদা থান পরে সুয়ে আছে একটা মহিলা আর তার নিচে একটা বাচ্চা মেয়ে বেত লাফাচ্ছে আর হাসছে আর ওই মহিলা কে বলছে মাম্মি নিচে নেমে আসো না প্লিজ।প্লিজ মাম্মি পড়ে যাবে তো।মেয়েটির হাসি টা এত সুন্দর ছিলো ম্যম আপনি দেখলেই মায়ায় পড়ে যেতেন।কিন্তু আমি মারাত্মক ভয়ে পেয়ে গেছিলাম ম্যাম।মাঝরাতে কত গুলা আত্মার সাথে সাক্ষাত হয়েছিলো আমার।আমি ভয়ে মৃদুল স্যার কে গিয়ে জড়িয়ে ধরি।মৃদুল স্যার আমাকে বলেন দ্রুত হসপিটাল এ চলো। স্যার এর চোখ দিয়ে পানি পড়ছিলো।গাড়ি চালানোর সময় আমি বলছিলাম স্যার ওখানে একটা ভয়ানক মহিলা আর বাচ্চা দেখেছি আমাকে মৃদুল স্যার বলেন ওরা মা আর মেয়ে ওরা কেউ বেঁচে নেই।ওরা সবাই মৃত।স্যারের কথা শুনে আমি চমকে গিয়েছিলাম।
আমি ওখান থেকে এসে অসুস্থ হয়ে পড়ি।
এর পর ই শুনি যে মৃদুল স্যার আর বেঁচে নেই।ম্যাম ওইখানের ওই আত্মারাই মৃদুল্ল স্যার কে মেরেছে।
মৃদুল এর পিএ ছেলেটির ডাকনাম রিক।
তাসনিম রিক কে বলে তুমি ওখানে যাদের দেখেছিলে তাদের চিনবে রিক।
রিক বলে হ্যাঁ ম্যাম চিনবো।
তাসনিম বলে ঠিক আছে আগামিকাল ভোরে আমরা যাবো।
রিক বলে প্লিজ ম্যাম আমি আর না। তাহলে আমাকে ও মেরে ফেলবে।
তাসনিম বলে তোমাকে মারবে না রিক।আমি আছি তো।
পরের দিন তাসনিম আর রিক রওনা হয়।দু'ঘন্টার মাঝে পৌছে যায় সেখানে।তাসনিম হঠাত আলিয়া কে দেখে অবাক হয়ে যায়।আলিয়া এখানে।সেদিন মর্গে মায়ার লাশ দেখে ছুটি নিলো আর এতদিনে সে হসপিটালে যায় নি।আর আলিয়া এখানে কেনো?
আলিয়া তো বলতো ওর বাসা মেইন শহরে তাহলে আলিয়া এখানে কি করছে?তাসনিম খেয়াল করে দেখে আলিয়া একটা লোকের সাথে কথা বলছে।
রিক বলে ম্যাম আলিয়া ম্যাম যে লোকটার সাথে কথা বলছে উনি আমাদের সেদিন পালাতে এছিলাম।
তাসনিম অনেক বড় রহস্যর জট খুলতে যাচ্ছিলো এই অচেনা জায়গা থেকে।
পর্ব ১০
আলিয়া কি এমন কথা বলছে।আলিয়ার কথা শুনে লোকটা যেনো আরো ভয় পেয়ে যাচ্ছে কি এমন বলছে আলিয়া।তাসনিম আর মৃদুল দূর হতে বিষয় টা খেয়াল করে যাচ্ছে।লোকটা ভয়ে থর থর করে কাঁপছে।লোকটির চোখে মুখে ভীষণ ভয় ।আলিয়া লোকটির কাছ থেকে চলে গেলে লোকটি ভয়ে গুটিসুটি মেরে বসে পড়ে। তাসনিম ওই লোকটির কাছে গিয়ে বলে শুনুন আপনি এভাবে ভয়ে কাঁপছেন কেনো?আর ওই মেয়েটি কে ছিলো যার সাথে কথা বলছিলেন।তখন লোকটি বলে আমি কাউকে কিছু বলবো না।তাসনিম বলে আমি উনার পরিচিত আমাকে খুলে বলুন আমি সাহায্য করবো আপনাকে।তখন লোকটি তাসনিমের পা ধরে বলে আমি জানি তুমি ওদের ই লোক আমাকে মেরে ফেলতে চাও।আমি তো সব ই লিখে দিয়েছি আর কি চাও মা।আমাকে মেরে ফেললেই কি শান্তি তোমাদের।আমি তো তোমার বাবার বয়সী মা আমাকে মেরে কি শান্তি পাবে।
লোকটির হাহাকার আর প্রাণ ভীক্ষা দেখে তাসনিমের হৃদয় কেঁদে ওঠে।একটা মানুষ কতটা অসহায় হলে এভাবে প্রাণ ভীক্ষা চাই।
তাসনিম লোকটি কে বলে আমি আপনার মেয়ের মতো আমি আপনাকে কেনো মারবো।আপনি আমাকে ভরসা করতে পারেন।আমার দ্বারা আপনার কোনো ক্ষতি হবে না।লোকটা হটাত বেঁহুশ হয়ে যায়।
তখন তাসনিম রিক কে বলে রিক তুমি এনার বাসা চিনো।রিক বলে হ্যাঁ ম্যাম চিনি।রিক আর তাসনিম লোক টি কে ধরে তার বাড়িতে নিয়ে যায়।গভীর এক জঙ্গলে লোকটির বাড়ি।এখানে দিনের বেলা ও কেউ থাকে না।রাতের বেলা এরা কিভাবে এখানে থাকে।
বাড়িতে কেউ নেই শুধু একটি মহিলা ছাড়া।মহিলাটি এই লোকটির স্ত্রী ।মহিলাটি কত গুলা ছবি নিয়ে কাঁদছে।তাসনিম আর রিকের সাথে উনার হাজবেন্ড কে দেখে মহিলা ছবি গুলো ফেলে দিয়ে কেঁদে ওঠে।উনার কি হয়েছে কারা তোমরা।তাসনিম বলে উনি হঠাত অসুস্থ হয়ে পড়েছে।মহিলাটি উনার স্বামিকে খুব ই ভালবাসে দেখে বোঝা যাচ্ছে।
তাসনিম হঠাত তাকিয়ে দেখে মায়া আর একটি পুরুষ এর ছবি।এমন ই ছবি সে মৃদুল এর ঘরে দেখেছিলো।মায়ার সাথে কি রিলেশন এটা জানতেই হবে।এখানে কিছু না কিছু আছেই।এই লোকটির সাথে সেই মৃত বাচ্চা মেয়েটির হাসি খুশি কত গুলা ছবি।দেখে মনে হয় এরা একটা ফ্যামিলি।
এরা স্বামী স্ত্রী দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
তাসনিম ওই মহিলার দিকে তাকিয়ে দেখে দুজনের ই কেমন পাগল পাগল চেহারা হয়ে গিয়েছে।তাসনিম ওই মহিলাকে বলে আমাকে সত্যি করে বলুন আপনারা কে।এই টা তো মায়ার ছবি।মায়া আপনাদের কি হয় বলুন।আপনি মায়ার ছবি জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলেন কেনো?
মহিলা টি বলে না ওর ব্যাপারে কিছুই বলা যাবে না তাহলে মায়া রাগ করবে।মায়া অনেক রাগ করবে।
তাসনিম কোন ভাবেই কথা বের করতে পারছিলো না।
তাসনিম বলে মায়া আমার বন্ধু আমাকে খুলে বলুন।মায়ার সাথে কি হয়েছিলো আর আপনারা বা কারা।
অনেক রিকুয়েষ্ট এর পরে তাসনিম কে ওই মহিলা টি বলে মায়া আমাদের মেয়ে।এইটা মায়ার স্বামি।আর এই বাচ্চাটা মায়ার মেয়ে।
তাসনিমের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।
এরা মায়ার মা -বাবা।এদের এমন অবস্থা কেনো?আর এরা এভাবে এই জঙ্গলে আছে কেনো?
তাসনিম বলে মায়ার কি হয়েছিলো আন্টি বলুন।
মহিলাটি বলে আমার মেয়ে ভালবেসে বিয়ে করেছিলো কিন্তু ওর শ্বশুর বাড়ির মানুষ ওর ভালবাসা মেনে নেই নি।মায়ার ভাসুর মেনে নিয়েছিলো না।তাই তো রাতুল বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছিলো।রাতুল আমাদের বাড়িতেই থাকতো।আমার মেয়েটা অনেক সুখি ছিলো।ওর ফুটফুটে একটি বাচ্চা মেয়ে ছিলো তুসু।আমার জামাই রাতুল কে ওরা আগে মেরে ফেলেছিলো।তারপর আমার মেয়ে আর নাতনি কে মেরে ফেরে ফেলেছিলো।অনেক কাকুতি মিনতি করেছিলো বাঁচার জন্য কিন্তু ওরা ছাড়ে নি।ওরা কারা আমি জানিনা।আমার কিচ্ছু মনে নেই আমার মাথায় খুব যন্ত্রণা হচ্ছে।তোমরা যাও এখান থেকে।
তাসনিমের চোখ দিয়ে পানি ঝরে পড়ছে।কারা এতটা নিষ্টুর ভাবে মায়ার ফ্যামিলি ধ্বংস করেছে।কি উদ্দেশ্য ছিলো তাদের।
আর ওই হসপিটাল বা মায়ার নামে কেনো?কি কানেকশন জড়িত আছে সেটা খুজে বের করতেই হবে।
তাসনিম সেদিন মায়ার মা বাবাকে আর কোনো প্রশ্ন করে না।রিক কে নিয়ে সোজা মৃদুল দের গ্রামে যায়।
এই প্রথম বার তাসনিম মৃদুল দের বাড়িতে পা রেখেছে।বাড়িতে কি কেউ নেই কোথাও কোনো সাড়া শব্দ নেই।ঘরের মাঝে গিয়ে দুইটা পিকচার দেখে ভূমিকম্প শুরু হয় তাসনিমের মনে।তাসনিমের শরীর যেনো থর থর করে কাঁপছে।তাসনিমের মাথার মাঝে চক্কর মেরে ফেলে দেই।
রিক দ্রুত তাসনিম কে ধরে বলে ম্যাম কি হয়েছে আপনার।হটাত অসুস্থ হয়ে পড়লেন যে।
তাসনিম বলে রিক এই বাড়ির লোকজন কে ডাকো প্লিজ দ্রুত ডাকো রিক।বাড়ির মানুষ কোথায় আছে ডাকো।
তাসনিম ছবি দেখে মারাত্মক ভাবে শকড খেয়ে যায়।ছবিতে দুইটা হাসি খুশি ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।
পর্ব ১১
লতাসনিমের পুরা জীবন টা রহস্য ঢেকে গিয়েছে।এত কিছুই বা কেনো হচ্ছে তাসনিমের সাথে।এগুলা হওয়ার ই বা কারণ কি?তাসনিম আজ সত্যর অনেক কাছাকাছি চলে এসছে।
এমন সময় দুজনে মধ্যবয়স্ক পুরুষ আর মহিলা এসে হাজির হন।তারা তাসনিম কে বলে মা কারা তোমরা।
তাসনিম ছবির দিকে হাতের আঙুল দেখিয়ে বলে ওরা কারা।মহিলা টি বলে আমার দুই ছেলে মৃদুল আর রাতুল।মৃদুল বড় আর রাতুল ছোট।
মহিলাটি কে দেখে স্বাভাবিক লাগছে উনার মাঝে কোনোই শোকের ছায়া নেই।দুই দুইটা ছেলে যার মৃত সে কিভাবে এত স্বাভাবিক থাকতে পারে।
তাসনিম বলে আচ্ছা আপনার ছেলেরা কোথায়?তখন মহিলা টি বলে মৃদুল কে বেশ কয়েক দিন ফোনে পাই না।ওর হয়তো কাজের চাপ অনেক।খবর পাঠিয়েছিলো যে বিজি আছে আমরা যেনো চিন্তা না করি।তখন তাসনিম রাতুল এর কথা জিজ্ঞাসা করে তখন তাসনিম রাতুল এর কথা জানতে চাই।তখন মহিলাটা একটা করূন নিঃশ্বাস ছেড়ে বলেন,ও রাগ করে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছে।একটা মেয়ের জন্য চলে গিয়েছে।কোথায় গিয়েছে জানিনা।একদিন না একদিন ফিরে আসবে।
নিয়তি কি কঠিন কি নিদারূণ।দুই দুইটাই ছেলেই মৃত অথচ তার মা বাবা জানে না।এই হাসি খুশি মা কে কিভাবে তাসনিম বলবে তাদের সন্তান আর বেঁচে নেই।তাও দুই দুইটা ছেলেই আর বেঁচে নেই।তাদের একমাত্র নাতনি ও বেঁচে নেই।তাসনিম এর গলা শুকিয়ে যাচ্ছে সে কি বলবে বুঝতে পারছে না।তাসনিম চোখ ভরে শুধু পানি আসছে।তাসনিম মাটিতে বসে পড়ে আর কাঁন্নায় ভেঙে পড়ে।মৃদুল এর মা বলেন কি হয়েছে মা কাঁদছো কেনো?
তাসনিম মহিলাটি কে জড়িয়ে ধরে বলে মা আমার মা নেই আপনি মায়ের মতো আমার।আপনি কি চান না যারা আপনার সন্তান কে কেড়ে নিয়েছে তাদের শাস্তি দিতে।মৃদুল এর মা বলে কেড়ে নিয়েছে মানে। তাসনিম মৃদুল এর মাকে জড়িয়ে ধরে বলে মা আপনার ছেলেরা আর বেঁচে নেই।আপনার ছেলেরা এই পৃথিবীতে নেই মা।আপনি কাঁদুন মা প্লিজ।আপনি অনেক কাঁদুন না কাঁদলে যে হালকা হবেন না।মৃদুল এর মা সেন্স হারিয়ে ফেললেন মৃদুল এর বাবাও সেন্স লেস হওয়ার মতো অবস্থা। তারা শুধু তাসনিমের কাছে জানতে চাই তাদের নিঁখোজ হওয়া সন্তান কিভাবে মারা গেলো।তাসনিম শুধু বলে সঠিক টাইম হোক সব জানতে পারবেন।মৃদুল আর রাতুল এর মা বাবা প্রায় পাগল হয়ে গিয়েছেন তাসনিম তাদের চিকিৎসা করাচ্ছে হসপিটালে এনে।
সেদিন হসপিটালে ফিরে তাসনিম শুনে দুজন পূরনো কর্মচারী বলাবলি করছে মায়া দিদি অনেক ভাল ছিলেন।হসপিটাল টা যখন উনি চালাতেন আমাদের সাথে কখনো খারাপ বিহ্যাভ করতেন না।কিন্তু তাসনিম দিদি মনির বাবা মানুষ টা ভাল না।মায়া দিদি কতই না ভাল ছিলো।মায়া দিদির মেয়েটা হসপিটাল ভরে খেলা করে বেড়াতো।পুরা ফ্যামিলি টা কতই না হাসি খুশি ছিলো।এভাবে ধ্বংস হওয়ার কারণ জানতে পারলাম না।হসপিটাল নিলাম হয়ে গেলো আর তাসনিম দিদি মনির বাবা কিনে নিলেন।ভাগ্য মানুষ কে কোথায় নিয়ে দাঁড় করায়।
তাসনিম আলিয়া কে নিজের চেম্বারে ডেকে বলে আলিয়া আজ কোথায় গেছিলে তুমি।আলিয়া বলে আজ আমি কোথাও যায় নি।সোজা হসপিটালে চলে এসছি।আলিয়ার বলা মিথ্যা শুনে চমকে যায় তাসনিম।আলিয়াকে তাসনিম বলে আলিয়া পাপ বাপ কেও ছাড়ে না সো বি কেয়ারফুল আলিয়া।এইদিকে হসপিটালের ডোম মারা গিয়েছে।যে কিনা এত মানুষের লাশ কাটে আজ তাকেই কেউ মেরে ফেলেছে।
মায়ার আত্মাকে তাবিজে বন্দি করার জন্য হয়তো মায়ায় মেরেছে ডোম কে।ডোমের মুখমন্ডল সম্পূর্ণ নীল হয়ে আছে মৃদুল এর মতোই দেখতে হুবহু।মৃদুল এর যেভাবে মৃত্যু হয়েছে ডোম এর ও সেভাবে মৃত্যু হয়েছে।
তাসনিম আজ সত্যর অনেক টা কাছাকাছি।আসল সত্য টা হয়তো একমাত্র মায়া তাকে বলতে পারবে।
রাতে সুয়ে আছে তাসনিম আবরার আলমারি গোছাচ্ছে।আলমারি থেকে একটা এলবাম পড়ে। আবরারের আগে তাসনিম গিয়ে এলবাম খুলে চমকে ওঠে।আবরারের সাথে মায়ার ঘনিষ্ট পিকচার।তাসনিম অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে আবরারের সাথে মায়া কিন্তু কেনো?
তাসনিম আবরার কে বলে উনি কে?
আবরার তুতলিয়ে বলে ইয়ে মানে?
ইয়ে মানি কি? এটা তো মর্গের মায়া।উনার সাথে তোমার পিক কেনো?হুয়াই?
আবরার চুপ হয়ে আছে।
তার মানে তুমি আগে থেকেই চিনো?তাহলে এতদিন বলো নি কেনো?
আবরার কোনো কথা না বলে বেরিয়ে যায় রুম থেকে।
তাসনিমের মনে জন্ম নেই নতুন সন্দেহ?আবরার তো সেদিন মর্গে মায়াকে দেখে বললো না সে তার পূর্ব পরিচিত।শুধু বলেছিলো এর অপারেশন করেছিলো।শুধুই কি এতটুকু পরিচয়।এতটুকু পরিচয় ই যদি হবে তাহলে ওর সাথে আবরারের এত ঘনিষ্ট রিলেশন কেনো?কি কানেকশন আছে আবরারের সাথে।আর আবরার এভাবে আমাকে কিছুই না বলে চলে গেলো কেনো?
তাসনিম খেয়াল করে মাঝরাতে তাদের বাড়ির বাগানে ভয়ানক সাউন্ড হচ্ছে।তাসনিম ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে দেখে তাসনিমের বাবা কে গাছের সাথে ঝুলিয়ে রেখেছে মায়া।তাসনিমের বাবা বাঁচাও বলে ছটফট করছে।তাসনিম মায়াকে বলে প্লিজ মায়া আমার বাবাকে মেরো না।তুমি কিসের প্রতিশোধ নিচ্ছো মায়া।আর আমার বাবাকেই বা কেনো মারছো তুমি।কি করেছে আমার বাবা মায়া।
মায়া কোনো কথা না বলে তাসনিমের বাবার মুখে খানিক টা বিষ ঢেলে দিলো।তাসনিম কোন ভাবেই মায়াকে আটকাতে পারলো না।তাসনিমের বাবাকে বিষ দেওয়ার পর জীবন্ত অবস্থায় মায়া কাটা শুরু করে।তাসনিমের বাবা কে কেটে সাথে সাথে একটা রিপোর্ট লিখে দিলো বিষক্রিয়ায় মৃত্যু। হুবহু হসপিটালের মতো একটা পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট তাসনিমের হাতে ধরিয়ে দিলো মায়া আর সাথে উধাও হয়ে গেলো।
এই ঘটনার দ্বারা মায়া কি বোঝালো তাসনিম কে।মায়া কি অতীতের কিছু বুঝালো।
চলবে,,,,,
© bnbooks.blogspot.com
