মায়া - পর্ব (৫ - ৮) - ভয়ংকর ভূতের গল্প

মায়া
লেখিকা: মৌসুমী আক্তার
পর্ব ৫ -


পর্ব ৫

পর্দার আড়ালে ভয়ানক কোনো ছায়া দেখতে পাচ্ছিলো তাসনিম।ছায়াটা যেনো সোজা তাসনিমের দিকেই তাকিয়ে আছে।তাসনিল খেয়াল করে দেখে কারো চোখের সাদা অংশ দেখা যাচ্ছে।সে চোখ দিয়ে ইশারা দিয়ে তাসনিম কে ডাকছে।বাইরে এত সময় ঘোর অন্ধকার নেমে গিয়েছে। দরজা টা খুব জোরে হাওয়া দিচ্ছিলো।দরজার কড়া খুব জোরে নড়ছিলো।গা ছমছমে একটা ব্যাপার। হঠাত ছোট্ট একটা বাচ্চা দেখতে পাচ্ছিলো তাসনিম।তাসনিম কোনো অজানা টানে বাইরে বেরিয়ে আসে।তাসনিম দরজা খুলে বাইরে এসে একটি লাশ সনাক্ত করণ সিরিয়াল নাম্বার পায়।সিরিয়াল নম্বর টি ছিলো ১০৪।
তাসনিম নম্বর টি তুলে খুব দ্রুত হসপিটালের দিকে ছুটে ছুটে যায়।তাসনিমের মন ডেকে বলে এই সনাক্ত করন লাশ তাকে খুজতেই এসছিলো।
তাসনিম দেখতে চায় যে এই নম্বরে কোনো লাশ আছে কিনা।তাসনিম খুব দ্রুত ছুটে চলে কিন্তু ওর পথ ই যেনো ফুরাচ্ছে না।তাসনিমের বুক ধড়ফড় করছে মনে হচ্ছে কিছু একটা ভয়ানক সত্য সে জানতে পারবে।অজানা কোনো রহস্য তাকে খুজছে।তাসনিম দ্রুত গতিতে ছুটে চলেছে।তাকে এই মুহুর্তে দেখতেই হবে সত্যি কে এই লাশ।
অবশেষে তাসনিম হসপিটালে পৌছায়।তাসনিম হসপিটালে পৌছানোর পর দ্রুত মর্গে প্রবেশ করে।মর্গে প্রবেশ করে ১০৪ নং বাক্স খুলে দেখে ফুটফুটে একটি বাচ্চা সুয়ে আছে।ইস বাচ্চাটি কতই না মায়াবী দেখতে।এত সুন্দর ফুটফুটে একটি বাচ্চা কিভাবে মারা গিয়েছে।
এমন সময় তাসনিম খেয়াল করে অপর্না মায়ার ফ্রোজেন বক্স ১০৩।
তাসনিম চমকে ১০৩ আর ১০৪ পাশাপাশি দুইটা বক্স দেখে।এমন সময় তাসনিমের মনে পড়ে সেদিন রাতে অপর্না মায়ার পাশে একটি বাচ্চা মেয়েকে দেখেছিলো।এইতো সেই বাচ্চা মেয়েটা।
অদ্ভুত?
এই বাচ্চা মেয়েটাও মৃত।
নিশ্চয় কোন না কোনো রিলেশন আছে এদের দুজনের মাঝে।
তাসনিম হসপিটালের কাগজ পত্র চেক দিয়ে দেখে এই বাচ্চা মেয়েটা আর অপর্ণা মায়া এক ই দিনে মারা গিয়েছে।দুজনের মৃত্যু ই সুইসাইড এ হয়েছে।
অদ্ভুত ব্যাপার হলো এতটুকু বাচ্চা মেয়ে সুইসাইড এর কি বুঝে।
এমন কি ঘটেছিলো এই বাচ্চা মেয়েটি সুইসাইড করতে বাধ্য হয়েছিলো।তাসনিমের কাছে মারাত্মক সন্দেহ হলো এটা কোনো ভাবে সুইসাইড হতে পারে না।এর পেছনে অন্য কাহিনী আছে। ১০০% আছে।
দুঃচিন্তায় ভেঙে পড়েছে তাসনিম।এটা কোন রহস্য তে জড়িয়ে গেলো সে।তাসনিমের সাথে কোনো যোগসূত্র নেই তো এই রহস্যর।
এমন সময় মৃদুল মর্গে প্রবেশ করে।তাসনিম কে দেখে মৃদুল বলে তুমি এখানে।তাসনিম বলে তুমি এখানে।
মৃদুল তাসনিম কে বলে তোমার সাথে আমার অনেক কথা আছে তাসনিম।মৃদুল খুব ঘামছে ভয়ানক কোনো দুঃচিন্তা করছে সে।তাসনিম বলে কি কথা মৃদুল।
মৃদুল বলে এই মায়ার লাশ আজ আমার কাছে এসছিলো তাসনিম।ও চলতে পারে কথা ও বলতে পারে।ও কোনো লাশ না তাসনিম।ও কিছু বলতে চাই আমাকে।ও কোনো কিছর ইঙ্গিত দিচ্ছিলো আমাকে।
তাসনিম তখন বলে ব্যাপার টা কি খুব সন্দেহর না মৃদুল।এত মানুষ রেখে তোমার কাছে কেনো বার বার যাচ্ছে এই লাশ।
এর আত্মা কেনো তোমার সাথেই দেখা দিচ্ছে।
সত্যি করে বলো মৃদুল।এর পেছনে কি কাহিনী লুকিয়ে আছে।তোমার সাথে কিছু না কিছু কানেকশন আছেই মৃদুল।
মৃদুল তাসনিম কে বলে বিশ্বাস করো তাসনিম আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানিনা।আমি নিজেই পাগল হয়ে যাচ্ছি কি চাই এই লাশ।
তাছাড়া চার বছর আগের একটি লাশ আজ ও জীবীত হয়ে কিভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
সেদিন তাসনিম আর মৃদুল কথা কাটাকাটি করে বেরিয়ে যায়।
কিন্তু তারপর ই অনেক বড় একটা রহস্য সামনে আসে তাসনিমের।তাহলে কি মৃদুল ই এর সাথে জড়িয়ে আছে।

পর্ব ৬

বাইরে নিকশ কালো অন্ধকার, সম্পূর্ণ আমাবস্যার রাত হবে।এমন ভয়ানক অন্ধকারে বাইরে বাগানে একটা আলো দেখতে পাচ্ছে তাসনিম।তাসনিম খেয়াল করে দেখে কারো চোখ দিয়ে আলো বেরোচ্ছে।তাসনিম আলো টা দেখে বাইরে বেরিয়ে আসে। তাসনিমের মনে বিন্দুমাত্র ভয় কাজ করছে না।বাইরে মৃদু মৃদু বাতাস বইছে হঠাত তাসনিম খেয়াল করে কালো কিছু একটা বসে আছে আর সে তাসনিমের দিকে তাকিয়ে আছে আর তারই চোখ দিয়ে আগুন বেরোচ্ছে।
তাসনিম ভয়ে দৌড় দেই আর তখন ই তাসনিম হোচট খেয়ে পড়ে যায়।তাসনিম কারো পায়ের উপোর পড়ে।তাসনিম উপর দিকে তাকিয়ে দেখে মায়া।মায়া কে দেখেই তাসনিম চিৎকার দিয়ে বলে আমাকে মারলে মেরে ফেলো।কিন্তু এভাবে আর আতঙ্কে রেখো না।কে তুমি নাম কি তোমার।
সাথে সাথে তাসনিমের চোখের সামনে কিছু লেখা ভেসে আসে।আমাকে সাহায্য করো।মৃদুল সব কিছু জানে বলেই হাওয়া হয়ে গেলো সে লাশ।
মৃদুল কি জানে? কি করেছে মৃদুল।
মৃদুল এর কোনো অতীত জড়িয়ে নেই তো।
মৃদুল এক ভাবে সাত দিন হসপিটালে আসে না।তাসনিম এর বিয়ে আবরার এর সাথে হলেও তাসনিম মৃদুল কেই ভালবাসে।মৃদুল এর প্রতি তার ভালবাসার বিন্দুমাত্র কমে নি।তাসনিমের মন টা আজ বড্ড উতালা।এত কাকতালীয় ঘটনার মাঝে মৃদুল কোথায় হাওয়া হয়ে গেলো।তাসনিম সাতদিন পরে মৃদুল এর বাসায় যায়।বাসায় কেউ নেই। মৃদুল এর ফ্ল্যাট এর একটা চাবি তাসনিমের কাছে ছিলো।তাসনিম সেই চাবি টা দিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে।
তাসনিম মৃদুল কে ফোনেও পাচ্ছে না।
এমন সময় হঠাত তাসনিমের সামনে একটা ছবি উড়ে আসে।ছবি টা দেখেই তাসনিম চমকে যায় একি এটা তো মর্গের সেই বাচ্চাটার ছবি।
তাসনিমের বুক টা কেঁপে ওঠে এই বাচ্চাটার পিকচার মৃদুল এর রুমে।ছবিটার পিছনে আবার কিছু একটা লেখা আছে।
তার মানে মৃদুল এই বাচ্চাটিকে চিনে।কই সেদিন তো মর্গে এমন একটা ভাব করলো যেনো সে চিনেই না জানেই না কিছু।
মৃদুল কেনো লুকালো ঘটনা টা।
যে বাচ্চার পিকচার সাথে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে অথচ সে বাচ্চাকে না চেনার ভান করছে কিন্তু কেনো?
কি লুকাচ্ছে মৃদুল।কি সম্পর্ক মৃদুল এর সাথে।
আর মৃদুল ই বা কোথায় গিয়েছে?
এর ই মাঝে মৃদুল এর ফোন থেকে একটা মেসেজ আসে, তাসনিম অনেক বড় কোনো রহস্যর সন্ধান পেয়েছি।তুমি সাত দিন পর আমার ফ্ল্যাটে এসো।আমি বাসায় নেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজে এসছি।তাসনিম হতাস হয়ে পড়লো।
মনে মনে রাগে ঘৃনায় নিজেই কষ্ট পাচ্ছে তাসনিম।
ছিঃমৃদুল এতটা নিকৃষ্ট।
কেনো মৃদুল সব টা লুকালো।আমাকে খুজে বের করতেই হবে।
সাত দিন হয়ে গিয়েছে তাসনিম মৃদুল এর বাসায় সেদিন সন্ধ্যায় আবার আসে।
মৃদুল বাসায় ই আছে।তাসনিম মৃদুল এর ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে দেখে সব লাইট গুলো অফ করা, কত গুলো ছবি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।ছবি গুলো দেখে তাসনিম চমকে ওঠে এই ছবি তো অপর্ণা মায়ার।কিন্তু উনার সাথে এই পুরুষ টি কে।অনেক গুলা হাসি খুশি প্রানবন্ত ছবি।কিন্তু আজ এই মেয়েটি আর বেঁচে নেই।
ছবির ছেলেটি কে হতে পারে?
মৃদুল এর মুখে কোনো কথা নেই।
তাসনিম মৃদুল কে বলে মৃদুল কে এই মহিলা।আর এর সাথে কিসের রিলেশন তোমার।তোমার কাছে এদের এত পিকচার কিভাবে এসছে।উত্তর দাও।কি লুকাচ্ছো তুমি।
মৃদুল হটাত বলে ওঠে আমি পাপ করেছি।বেঁচে থাকার অধিকার আমার নেই।তুমি মেরে ফেলো আমায় অপর্ণা।আমি বেঁচে থাকার যোগ্য নয়।মৃদুল এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখছে। হঠাত মৃদুল এর রুমের লাইট গুলো অন অফ হতে থাকে।বাইরে প্রচন্ড হাওয়া দিচ্ছে। মৃদুল হাওয়ার সাথে পেছনে যাচ্ছে।তাসনিম ঘটনাটা দেখে চমকে যায় এভাবে একটা মানুষ হাওয়ায় ভেষে হাঁটছে।৷
ঘরের দরজা নিজে থেকে খুলে গেলো।মৃদুল নিজেই দরজা দিয়ে বাইরে বেরোচ্ছে।মৃদুল নিজে হাঁটছে না মৃদুল কে অদৃশ্য কোনো শক্তি এভাবে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।প্রচন্ড ঝোড়ো হাওয়া বইছে বাতাসের গতিবেগে তাসনিম পড়ে পড়ে যাচ্ছে।তাসনিম নিজের অজান্তে কখন গাড়িতে গিয়ে বসেছে সে নিজেও জানেনা।তাসনিম খেয়াল করে তার পাশে বসে আছে মৃদুল।
গাড়িতে এসে অপর্ণা মায়া ও বসেছে।সে গাড়িটা প্রচন্ড জোরে চালাচ্ছে।তাসনিম বলে প্লিজ এত জোরে চালিও না।এক্সিডেন্ট হয়ে যাবে।গাড়িটা ঝড়ের গতিতে চলছে।এমন সময় তাসনিম খেয়াল করে মৃদুল এর মুখ নীলবর্ণ ধারণ করে আছে।
এমন নীলবর্ণ দেখে তাসনিম চমকে যায়।এমন দৃশ্য তাসনিম আগেও দেখেছে।হুবহু এমন মুখের আকৃতি।
তাসনিম এর মনে নতুন সন্দেহর সৃষ্টি হলো।

পর্ব ৭

মৃদুলের মুখ সহ সমস্ত শরীর নীল বর্ণ ধারণ করে আছে থর থর করে কাঁপছে।তাসনিম মৃদুল এর মুখ ধরে বার বার ডাকাডাকি করছে মুখে সাদা ফেনাতে ভরে গিয়েছে।মৃদুল বারবার কিছু বলার চেষ্টা করছে।কিন্তু কিছুই বলতে পারছে না।তাসনিম চিৎকার দিয়ে বলে প্লিজ মৃদুল আমাকে বলে যাও মায়ার পরিচয়।প্লিজ মৃদুল এভাবে চলে যেও না।মৃদুল ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে।তাসনিম বার বার চিৎকার দেই মৃদুল আমাকে এভাবে রহস্যর মাঝে রেখে যেও না।আমি মায়া সম্পর্কে জানতে চাই।আমাকে মায়ার অতীত বলে যাও।
মায়া আরো জোরে গাড়ি চালাচ্ছে।
কি অদ্ভুত ব্যাপার মায়া একবার ও পেছনে ঘুরে তাকাচ্ছে না।কয়েক মিনিটের মাঝেই হসপিটালে পৌছে গেলো ওরা।এমন সময় মায়া হাওয়া হয়ে গেলো।আর গাড়ি টাও স্টপ হয়ে গেলো।
তাসনিম চিৎকার দিয়ে সবাই কে ডাকে।তাসনিমের ডাকে বিভিন্ন ডাক্তার সহ নার্স এগিয়ে আসে।মৃদুল কে দেখে অন্য সব ডাক্তার নার্স রা অবাক হয়ে যায়।মৃদুল এমন ভয়াবহ অবস্হা দেখে।
একজন ডাক্তার হয়েও তাসনিম মৃদুল কে বাঁচাতে পারে নি।
মৃদুল কে হসপিটালের বেডে রাখতে রাখতে ওর মৃত্যু হয়।
তাসনিম সেদিন দেখেছিলো মায়ার লাশটার ও হুবহু সেইম অবস্থা। অদ্ভুত কোনো কারণে অনেক কিছু আছে যেটা শুধু তাসনিমের চোখেই পড়ছে আর অন্য কারো চোখে পড়ছে না।তাসনিম মায়ার মুখ মন্ডলে দেখেছিলো ভয়াবহ নীল বর্ণ।আর মুখ দিয়ে ফেনা বেরোচ্ছে।সেদিন মনে হয়েছিলো এক্ষুণি হয়তো মাত্র মায়া গেলো।তাকে দেখে বুঝার উপায় ছিলো না যে চার বছর আগের লাশ।
মৃদুল এর পোস্ট মর্টেম করার পর রিপোর্ট দেখে আরো বেশী কেঁপে ওঠে তাসনিম। মায়ার শরীরে যে বিষ মৃদুল এর শরীরে হুবহু সেইম বিষ পাওয়া গিয়েছে।চার বছর আগে যে বিষ পানে মৃত্যু হয়েছিলো মায়ার আজ হুবহু সেইম বিষে মৃত্যু মৃদুল এর।
যেটা দেখে বুঝতে বাকি নেই এটা মায়ার আক্রমণ। নিজের সাথে হয়ে যাওয়া অন্যায়ের প্রতিশোধ।
কেটে গেছে সাত দিন।
তাসনিমের বাবা বলেন মা দেখ, সেদিন কেনো আমি তোকে মৃদুল এর সাথে বিয়ে দেই নি।বাবার মন বুঝতে পারে আসলে কি ঠিক কি ভুল।আমি জানতাম মৃদুল তোর জন্য ভালো ছেলে না।তাই আমি তোর বিয়ে মৃদুল এর সাথে দেই নি।আজ দেখ মৃদুল কত বড় পাপী ছিলো। কারো অভিশাপ ছিলো ওর জীবনে।
এমন সময় আবরার রুমে প্রবেশ করে বলে তাসনিম আজ থেকে আর কোনো অশরীরী ছায়া থাকবে না।মায়া তার প্রতিশোধ নিয়ে নিয়েছে। ওর রাগ ছিলো মৃদুল এর উপোর তাই ও মৃদুল কে মেরে ফেলেছে।আজ থেকে ওই নামক আত্মা তোমাকে আর বিরক্ত করবে না ভয় দেখাবে না।
তাসনিম আবরার এর দিকে তাকিয়ে বলে কিসের রাগ।
আবরার বলে আসলে তাসনিম মৃদুল অনেক বড় পাপ করেছিলো যেটা ও কাউকেই বলতে পারে নি।অপর্ণা নামক মেয়েটির সাথে ওর রিলেশন ছিলো।অপর্ণা অন্য একজনের বউ ছিলো।মৃদুল এর সাথে পরকিয়াতে জড়িয়ে পড়ে।অপর্ণা ওর স্বামিকে ছেড়ে মৃদুল এর সাথে পালিয়ে আসতে চাই কিন্তু মৃদুল শুধু ওর দেহ আর ওর টাকায় ডাক্তারি টা পাশ করতে চেয়ছিলো।মৃদুল এর কাজ যখন শেষ তখন ও মায়াকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলে।মায়া মেয়েটা ভাল বাসায় ধোকা খেয়ে ওর অতৃপ্ত আত্মা এখনো শান্তি পাই নি। তাই প্রতিশোধ নিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
তাসনিম বলে তুমি এগুলা কিভাবে জানলে।
মৃদুল এর বাড়িতে গিয়ে একটা ডায়রি পেয়েছি।সেখানে ওদের অনেক গুলা ছবি পেয়েছি।আর ডায়রিতে সব টা লেখা পড়ে বুঝেছি।তাসনিম আমি বুঝতে পারছি আজ ও আমাকে মেনে নিতে পারো নি।মৃদুল এর জন্য আমার ও কষ্ট হচ্ছে কিন্তু যে নেই তার জন্য কেঁদে কি করবে।
তাসনিম কেঁদে কেঁদে বলে আমি যদি আগে এটা বুঝতে পারতাম তাহলে মৃদুল কে আমি নিজে হাতে খুন করতাম।আমার কষ্ট লাগছে মায়ার জন্য।মায়া আমার কাছে সাহায্য চেয়েছে।আমি সাহায্য করার আগেই ও নিজের প্রতিশোধ নিয়ে নিয়েছে।
তার পরের দিন তাসনিম হসপিটালে যায়।হটাত কি মনে করে হসপিটালের লকার খুলে।কোনো একটা কাগজ খুজে পাচ্ছে না তাই।কিন্তু হসপিটালের লকার খুলে তাসনিম একটা কাগজ দেখে অবাক হয়ে যায়।
হসপিটালের নাম অপর্না মায়া দেওয়া।
ওহ মাই গড এটা কিভাবে পসিবল।
এই হসপিটাল অপর্ণা মায়ার নামে।
কিন্ত কিভাবে?
এটা মায়ার কোনো প্রতিশোধের কারণ নয় তো।
তাসনিমের মনে আবার ও নতুন রহস্য ঢুকে গেলো।মাথায় পেইন এ ছটফট করছে তাসনিম।তার মাথায় আর এসব সে নিতে পারছে না।একটার পর একটা রহস্য তার জীবনে লেগেই আছে।কিভাবে মুক্তি পাবে সে।
এদিকে আবার মৃদুলের বাড়িতেও যেতে হবে। সেখানে গিয়ে ওদের ছেলের মৃত্যুর আসল কারণ টা জানাতে হবে।তাসনিম মৃদুল এর ফ্ল্যাটে যায় সেই ডায়রিটা পড়ার জন্য।আশ্চর্য ব্যাপার মৃদুল এর ফ্ল্যাটে যে ছবি গুলা সে দেখেছিলো সেগুলো একটাও সেখানে নেই।পুরা ফ্ল্যাটের কোথাও কিছু নেই।তাসনিম হতাস মনে হসপিটালে ফিরে আসে।
তাসনিম এবার সিওর হয়ে গিয়েছে তার সব প্রশ্নের উত্তর মায়া দিতে পারবে।তাসনিম মর্গে প্রবেশ করে। মর্গে গিয়ে কাঁন্নায় ভেঙে পড়ে বলে মায়া প্লিজ আমায় বলো কি রহস্য লুকিয়ে আছে।আমি জানি এখনো অনেক রহস্য আছে যেটা তুমি জানাতে চাও।আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি প্লিজ মায়া আমাকে বলো।আমি তোমাকে সব টা দিয়ে সাহায্য করবো।
হঠাত তাসনিম খেয়াল করে মায়ার লাশের ফ্রোজেন বক্স টা নিজে থেকে খুলে গিয়েছে। তাসনিম এগিয়ে গিয়ে দেখে মায়ার লাশ টা নেই। তাসনিমের বুকটা চমকে ওঠে মায়ার লাশ টা নেই কেনো? তাসনিম ১০৪ নং বক্স টা খুলে দেখে সেখানেও লাশ টা নেই।ওদের দুজনের লাশ কোথায় চলে গেলো।ভয়ে তাসনিনের বুক কাঁপছে এটা আবার কোন রহস্য।
সেদিন তাসনিম হসপিটাল থেকে আবরার এর সাথে বাসায় আসার সময় সন্ধ্যায় একটা ক্যাফে প্রবেশ করে।আবরার তাসনিম এর মন ভালো করার জন্য নিয়ে যায়।দুজনে বসে কফি খাচ্ছে আর গল্প করছে।এমন সময় আবরার খেয়াল করে তাদের পাশের টেবিলে মায়া আর সেই বাচ্চাটা বসে খাচ্ছে।তাসনিম এর তখন ফোন এসছে ফোন নিয়ে একটু সাইডে গিয়েছে।আবরার এমন ঘোর সন্ধ্যায় একটা মৃত মানুষ কে তার পাশের টেবিলে বসে খেতে দেখে চমকে যায়।ওরা দুজনেই আবরার এর দিকে তাকিয়ে হেসে যাচ্ছে।ওদের হাসি দেখে আবরার জ্ঞান হারানোর মতো অবস্থা। আবরার ওখান থেকে দ্রুত গতিতে উঠে যায়।তাসনিম ফোন টা কেটে বলে তোমাকে এমন লাগছে কেনো?আবরার বলে একটু অসুস্থ লাগছে চলো বাসায় যায়।তাসনিম কে বললে আবার তাসনিম চিন্তা করবে এটা ভেবে তাসনিম কে ব্যাপার টা বলে না।
সেদিন রাতেই দুজনে সুয়ে আছে।রুমে হাল্কা ডিম লাইটের আলো।হঠাত আবরার এর পায়ে কিছু একটা দেখতে পায় তাসনিম।তাসনিম আবরার কে বলে তোমার পায়ে ওটা কি?..
আবরার খেয়াল করে মৃত মানুষ সনাক্ত করণ সিরিয়াল নম্বর লেখা আছে।যেটা দেখে আবরার খুব জোরে চিৎকার দিয়ে বলে কি চাও তুমি।
এমন সময় জনালার বাইরে তাসনিম কিছু দেখতে পায়।

পর্ব ৮

বাইরে বিদ্যুতের আলো টা হটাত নিভে গেলো।অথচ রুমের আলো টা জ্বলছে।বাইরে কেউ আলো টা নিভিয়ে দিয়েছে।তাসনিম তাকিয়ে দেখে ব্যাক সাইড দেখা যাচ্ছে শুধু।সাদা শাড়ি পরা বড় একজন মহিলা আর তার হাত ধরা ৪-৫ বছরের একটি বাচ্চা মেয়ে তার ও সাদা কাপড় পরা দুজনের ই চুল গুলো ছেড়ে দেওয়া।ওরা তাসনিমের বারান্দা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।তাসনিম দ্রুত ঘরের দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে দেখে কোথাও কেউ নেই।
এইদিকে আবরার বলছে ও আমাকে মেরে ফেলবে।ও মরে নি।ও মেরেই ফেলবে আমাকে।তাসনিম অবাক হয়ে আবরার কে বলে ও কেনো মারবে তোমাকে।আর কে ও?আবরার বলে কারণ আমরা মৃদুল এর পরিচিত তাই?তাসনিম অবাক হয়ে মৃদুল কে প্রশ্ন করে তার মানে তুমি মায়ার কথা বলছো।
হ্যাঁ তাসনিম মায়া।এখানে মায়া এসছিলো।দেখো আমার পায়ে এটা কি বেঁধেছে।তাসনিম তাকিয়ে দেখে ১০৫ লেখা আছে।এটা কিসের ইঙ্গিত। মায়া কিসের ইঙ্গিত দিতে চাইছে।
তখন তাসনিমের খেয়াল হয়,,
ওহ গড!মায়ার লাশ সনাক্ত করণ নাম্বার ছিলো ১০৩,ওই বাচ্চাটার ১০৪ আর আবরার এর পায়ে ১০৫। ওহ নো মায়া এবার আবরার কে টার্গেট করেছে কিন্তু কেনো?শুধু মাত্র মৃদুল এর বন্ধু বলে বা পরিচিত বলে।
তাসনিম আবরার কে বলে চিন্তা করো না।কিচ্ছু হবে না আমি আছি।আবরার কে মিথ্যা শান্তনা দিয়ে তাসনিম দুঃচিন্তা করছে।হঠাত ঘুমের রাজ্য পাড়ি জমায় তাসনিম।
তাসনিম স্বপ্ন দেখে মায়া তাকে ডাকছে আর সাহায্য চাইছে।মায়া তাসনিম কে বলছে আমি প্রতিশোধ না নিয়ে আমার জগতে যাবো না তাসনিম।আমাকে সাহায্য করো।আমাকে ওরা বন্দী করে রেখেছে।তোমাদের হসপিটালের পেছনের বকুল গাছে বাঁধা তাবিজ টা খুলে দাও তাসনিম।আমার আত্মা ওরা তাবিজে বন্দি করে রেখেছে।আমি বের হতে পারছি না।
এমন স্বপ্ন দেখে চমকে ওঠে তাসনিম।এ কারণেই কি মায়ার লাশ টা মর্গে নেই।এ জন্য ই কি ওর লাশ টা উধাও।কিন্ত কে এই লাশ টা উধাও করবে।তাতে কার কি লাভ।তাসনিম ফজর আর আজান এর আগেই পৌছে যায় হসপিটালের পিছনে।তাসনিম গিয়ে দেখতে পাই একটা তাবিজ ঝুলছে।তাসনিম তাবিজ টা খুলে ছুড়ে ফেলে দেই।সাথে সাথে মায়ার আত্মা টার আগমণ ঘটে।
তাসনিম বলে বলো অপর্না কে তোমাকে এখানে আটকে রেখেছিলো।কে সে যে চাইনা তুমি প্রতিশোধ নাও।কে এই তাবিজে বন্দি করেছে।মায়া তখন তার চোখ ইশারা দিয়ে আকাশের দিকে তাকায় আর সেখানে লেখা ওঠে ডোম।
তাসনিম চমকে যায় ডোম।উনি কিন্তু কেনো?উনি কি লুকাতে মায়ার আত্মকে সরাতে চান।
পরের দিন ডোমকে আর খুজে পাওয়া গেলো না।কোথাও নেই ডোম।কোথায় যেনো হারিয়ে গিয়েছে।এমন টাইমে মৃদুল এর পিএ তাসনিম কে বলে ম্যাম কিছু কথা বলতে চাই আপনাকে।মৃদুল স্যার এর বিষয়ে।তাসনিম বলে বলুন।তখন সে বলতে শুরু করে,,
"ম্যাম সেদিন মৃদুল স্যার আমাকে নিয়ে বেরিয়েছিলো। স্যার আমাকে বলেছিলো একটা ঠিকানা আমাকে খুজে বের করতেই হবে।স্যার কে অনেক চিন্তিত লাগছিলো।স্যার ঠিকানা অনুযায়ী যেখানে গেছিলো সেটা ছিলো শহর ছেড়ে খানিক টা দূরে জাউগা টার নাম পোড়াবাড়ি।মানুষ পোড়াবাড়ি নামেই চিনে।ওখানে যাওয়ার পর স্যার যেটা খুজছিলেন কিছুতেই খুজে পাচ্ছিলেন না।দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা হবার পর নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌছায়।বাড়িটা দেখে মনে হচ্ছিলো ভুতুড়ে বাড়ি।ওই বাড়িতে গিয়ে দেখি একটা আলো জ্বলছে টিপ টিপ করে।একটা মানুষ বসে আছেন ঘরের ভেতরে।আমরা অনেক ডাকাডাকির পরেও সে দরজা খোলে না।অনেক পরে দরজা খোলে যখন স্যার বলেন মায়া কে চিনেন।সাথে সাথে লোকটি দরজা খোলে।জানিনা স্যার উনাকে আড়ালে নিয়ে কি কি বললেন।তবে লোকটির নাম রাতুল এটুকু জানি।লোকটির সাথে কথা বলা শেষে হটাত লোকটি হারিয়ে যায়।তাকে কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।এমন সময় একটা লোক আমাদের বলেন কাকে খুজছেন আপনারা আমরা রাতুল এর নাম বলতেই উনি বলেন সে মারা গিয়েছে ৬ বছর আগে।আপনারা পালান ও দেখা দিয়েছে মানে মেরে ফেলবে।"
চলবে,,,,,

© bnbooks.blogspot.com

Bnbooks is one of the largest archieve storage of pdf books, Bengali story, Bangla Kobita, Lyrics and all Kinds of Literature. Tags: Free Bangla pdf books download, Bangla Kobita, Technology News, Song Lyrics.