ম্যাম লাশ টির পেটের বাচ্চা টা এখনো জিবীত আছে।বাচ্চাটা রেসপন্স করছে।দেখে মনে হচ্ছে এক্ষুণি ডেলিভারি হয়ে যাবে।
বাচ্চাটা পোস্ট মর্টেম এর পরেও মরে নি ম্যাম।
আলেয়ার কথা শুনে সংকিত তাসনিম।
--Are you mad aliya?মৃত লাশের ডেড বডির বেবি কিভাবে রেসপন্স করে।
আলিয়া বলে জ্বী ম্যাম লাশ টা নড়াচড়া করছে।আমার মনে হচ্ছে উনি জীবীত ম্যাম।
--তুমি কি পাগল পোস্ট মর্টেম করা লাশের বডিতে তার সন্তান জীবীত থাকে কিভাবে।আমরা সব রকম পরীক্ষা করেই দেখেছি মা আর সন্তান দুজন ই মৃত।
ঘড়িতে রাত তখন সাড়ে তিন টা হবে।লাশটার পায়ে একটা নম্বর ও বেঁধে দেওয়া হয়ে গিয়েছে।
চারদিক ভীষণ শুনসান নিরবতা।কোথাও কেউ জেগে নেই।মাঝে মাঝে দু এক টা কুকুরের ডাক ভেষে আসছে বাইরে থেকে।গভীর রাতে শুধুই ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে।
গভীর রাতে সবাই ঘুমিয়ে আছে। জেগে আছে শুধু আলেয়া,তাসনিম,মৃদুল,আর আবরার।
আলেয়া বলে ম্যাম আপনি নিজেই দেখুন এর পেট নড়াচড়া করছে।তাসনিম এগিয়ে এসে দেখে তেমন কিছুই না।এটা আলেয়ার নিছক ই ঘোর হবে।তাসনিম বলে আলেয়া সারাদিন লাশেদের সাথে থাকতে থাকতে তুমি পাগল হয়ে গিয়েছো।
লাশের পায়ের সাথে বেঁধে দেওয়া নাম্বার টা বাতাসে খুলে পড়ে যাচ্ছে বার বার।তাসনিম এই নিয়ে ৪-৫ বার বেঁধে দিলো।
আলিয়া মর্গের কেয়ার টেকার।লাশ পোস্ট মর্টেম এর জন্য রেডি করা। লাশের পায়ে নাম্বার বেঁধে দেওয়া এগুলা আলিয়ায় করে থাকে।তাসনিম অত্যান্ত ব্রিলিয়ান্ট একজন ডাক্তার।তাসনিমের বাবাও অনেক বড় একজন ডাক্তার।এই হসপিটালে চাকরি করতে এসে মৃদুল এর সাথে রিলেশন হয় তাসনিমের।তাসনিমের বাবা এ বিয়েতে রাজি নন। মেয়ের অনিচ্ছা সত্ত্বেও সে তার বোনের ছেলে আবরার এর সাথে বিয়ে দিয়ে দেন তাসনিমের।এই একই হসপিটালে চাকরি করছে তিনজন।
আলিয়া আবার ও চিৎকার দিয়ে উঠলো ম্যাম স্যার কে ডাকুন না প্লিজ।এনার সিজার করুণ এক্ষুণি।এর বেবিটা বেঁচে আছে ম্যাম।দেখুন কিভাবে চিৎকার দিয়ে কাঁদছে।আলিয়া খেয়াল করে দেখে লাশ টি তার দিকে তাকিয়ে আছে।আলিয়া ভয়ে ছুটে গিয়ে পড়ে।
তাসনিম এগিয়ে এসে দেখে মৃত মেয়েটির পেট নড়াচড়া করছে।তাসনিম ভয়ানক ভাবে চমকে যায়।এটা কিভাবে পসিবল।পয়জন খেয়ে একটা মেয়ে মারা গিয়েছে তার বেবি কিভাবে বেঁচে থাকতে পারে।
তাসনিম তাকিয়ে দেখে মেয়েটি নিশ্চুপ ভাবে সুয়ে আছে।যেনো মরেই নি।মায়াবী দেখতে মেয়েটা।দেখে মনে হচ্ছে মেয়েটা কিছু বলবে।কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব সাত দিন আগে মারা যাওয়া একটা লাশ।পোস্ট মর্টেম ও করা হয়ে গিয়েছে।মেয়েটি সুইসাইড করে মারা গিয়েছে।পয়জন এ পেটের সন্তান টাও মারা গিয়েছে।এখন কিভাবে সম্ভব তার পেটের সন্তান বেঁচে থাকাটা।
তাসনিম ডাক্তার মৃদুল কে সাথে সাথে ফোন দেন।মৃদুল একবার ও ফোন তুলছে না।অনেক্ষণ পরে ফোন তুলে বললো কি হয়েছে তাসনিম।
তাসনিম বলে একটা ভয়ানক ঘটনা ঘটেছে একটা লাশ রেসপন্স করছে।প্লিজ দ্রুত এসো।
মৃদুল বলে এটা কোনো ভয়ানক ঘটনা হলো।আমরা অনেক সময় মৃত ভাবি কিন্তু আসলে ওরা মৃত না জীবীত ই থাকে।আমি একটা ক্রিটিকাল ডেলিভারি রুগি দেখছি।উনাকে না দেখে কিছুতেই যাওয়া সম্ভব নয়।
তাসনিম বলে মৃদুল এত রাতে কোথা থেকে রুগি এসছে তোমার কাছে।মৃদুল কোনো কথা না বলে ফোন টা কেটে দিয়ে আধা ঘন্টা পরে তাসনিমের কাছে যায়।মর্গে তাসনিম আর আলিয়া লাশ টা নিয়ে বসে আছে।মৃদুল এগিয়ে আসতেই আলিয়া হাঁপিয়ে এসে পড়ে।
আলিয়া মৃদুল কে বলে স্যার দেখুন না এই লাশ টা পোস্ট মর্টেম এর পরেও এর বেবি জীবীত আছে।
মৃদুল বলে তোমরাও না।কমন সেন্স নেই তোমাদের।অনেক সময় মৃত মনে হয় এমন অনেক মানুষ জীবীত ই থাকে।মৃদুল এগিয়ে গিয়ে বলে উনি এখানে।উনার তো কাল সকালে ডেলিভারি হওয়ার কথা আমি বলেই দিয়েছি।উনি এতক্ষণ আমার রুমেই ছিলেন।
আলিয়া বলে হোয়াট? উনি মারা গিয়েছেন আরো সাত দিন আগে।
পর্ব ২
---ম্যাম ডেড বডির পেটের বাচ্চাটা কথা বলা শুরু করেছে আপনি কান পেতে শুনুন আর ডেড বডি সম্পূর্ণ ভাবে রেসপন্স শুরু করেছে।ম্যাম এটা কিভাবে পসিবল একটা পোস্ট মর্টেম এর লাশ নড়ছে।
এত সময় ডেড বডি রেসপন্স করছিলো আর এখন তার বাচ্চা কথা বলা শুরু করেছে।
---আলেয়ার কথা শুনে আরেকবার চমকে ওঠে তাসনিম।মৃদুল আর তাসনিম চমকে গিয়ে আলেয়ার দিকে তাকায়।তাসনিম বলে আলেয়া আবার কি ভুলভাল বকা শুরু করলে।আলেয়া বলে না ম্যাম সত্যি কথা বলছি ম্যাম এই লাশের পেটের মাঝে কোনো অতৃপ্ত আত্মা নেই তো বলেই আলেয়া কাঁপতে থাকে।
---মৃদুল বলে তোমরা কি পাগল হয়ে গিয়েছো কেউ বলছো সাত দিন আগে মারা গিয়েছে এই মহিলা।আরে কুল প্লিজ উনি মারা যান নি।উনি জিবীত আছেন।আর উনি প্রেগন্যান্ট হয়েছেন ধরে আমার কাছে চিকিৎসা নিচ্ছেন।একটা জীবীত মানুষকে কিভাবে মৃত বলছো তোমরা।
---তাসনিম মৃদুল এর হাত চেপে ধরে বলে মৃদুল লুক হার।দেখো লাশ টা তাকে কাটাছেড়া করা হয়ে গিয়েছে।মৃদুল দেখো তার পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট। দেখো তার ডেড সার্টিফিকেট।
--মৃদুল এর জীবনে এমন ভয়ানক ঘটনা কখনো ঘটে নি তার ডাক্তারি জীবনে।মৃদুল খেয়াল করে দেখে মেয়েটির কপালের চামড়া কেটে সেলাই দেওয়া।বুক থেকে সোজা কেটে নিচে নামানো।মৃদুল তার মাথায় হাত রেখে বলে ওহ মাই গড তাসনিম হাউ ইজ ইট পসিবল।এই মহিলা কিছুক্ষণ আগেই আমার কাছে এসছিলেন আমি ভাবতেই পারছি না।আমার ডাক্তারী জীবনে এমন ঘটনা কখনো ঘটে নি।উনি দশ মিনিট আগে আমাকে বলছিলেন আমার একটা মেয়ে হবে ডাক্তার যার নাম রাখবো "মায়া"।এবং উনি এটাও আমাকে বললেন আমার মায়াকে এই দুনিয়াতে আসতেই হবে ডাক্তার।আমার মায়ার অনেক কাজ বাকি আছে।আমি হেসে বললাম অবশ্যই আসবে সে দুনিয়াতে।
তাসনিম নিজেই খেয়াল করে দেখেছে ডেড বডি নিজেও রেসপন্স করছে।ভয়ে তাসনিমের গলা শুকিয়ে গেলেও সে প্রকাশ করতে চাইছে না।
মৃদুল বলে উনাকে হসপিটালে কে এনেছিলো আলিয়া।
"আলিয়া বলে স্যার উনি পয়জন খেয়ে সুইসাইড করেছিলো উনার হাজবেন্ড এর সাথে।উনি হসপিটালে নিজেই এসছিলেন হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বলেন আমার গর্ভে আমার মায়া আছে।ওকে বাঁচান প্লিজ বলেই উনি মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন।উনাকে সাথে সাথে ওটি তে নেওয়া হয়।কিন্তু ততক্ষণে উনার বেবি সহ উনি মারা যান।ডাক্তার রা উনার সব রকম টেস্ট করেন আর দেখেন যে উনার বেবি গর্ভেই মারা গিয়েছে।উনার মৃত্যুর কারণ জানতে উনার পোস্ট মর্টেম করা হয় আর জানা যায় যে উনার বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছেন।আজ থেকে সাত দিন আগেই উনাকে মৃত বলে ঘোষনা করা হয় আর উনাকে লাশের সিরিয়াল নাম্বার টা বেঁধে দেওয়া হয়।স্যার পোস্ট মর্টেম এর সাত দিন পরে কিভাবে তার বেবি বেঁচে থাকতে পারে।স্যার লাশের পেট নড়াচড়া করছে।তাছাড়া ডেলিভারির সব রকম লক্ষণ দেখা দিচ্ছে।
স্যার আজ উনাকে ফ্রোজেন করা হবে বেওয়ারিশ লাশ হিসাবে।কিন্তু দেখুন এখন অদ্ভুত কিছু ঘটনা ঘটছে।স্যার আমি আর কাল থেকে মর্গে কোনো ডিউটি করতে পারবো না।"
--মৃদুল খেয়াল করে লাশ টা ঠান্ডা বরফ এর মতো হয়ে আছে।মুখ টাতে যেনো গভীর কোনো মায়া লুকিয়ে আছে।হঠাত মৃদুল খেয়াল করে লাশ টির ডান হাতের একটা আঙুল নড়ছে আর হাত টা মুঠো করা হাতের মাঝে একটা কাগজ। মৃদুল হাতের মুঠো থেকে কাগজ টা নিয়ে খুলে দেখে তাতে তাজা রক্ত দিয়ে লেখা মায়া।মৃদুল চমকে ওঠে দেখে ওহ গড ইনিই সেই মহিলা।যে আমার কাছে কিছুক্ষণ আগে এসছিলো।মৃদুল খেয়াল করে লাশটির ব্লাড ও চলছে।
মৃদুল ডোম কে ফোন দিয়ে বলে দ্রুত মর্গে আসতে।
--ডোম মর্গে এলে মৃদুল বলে এই লাশ টা কাটার সময় কোনো কিছু খেয়াল করেছিলে।ডোম বলে কবে স্যার এনাকে কাটা হয়েছে চেনা চেনা লাগছে।মৃদুল বলে সাত দিন আগে।ডোম বলে স্যার সাত দিন এর মাঝে কোনো মহিলাকে আমি কাটি নি।আপনি খাতা দেখতে পারেন।তাসনিম এবার আরো ভয় পেয়ে যায়।
এটা কি ভয়ানক রহস্য শুনছে সে।
--মৃদুল বলে খেয়াল করে দেখো তো এনাকে তুমি কেটেছো কিনা।আর এনাকে কাটার সময় অদ্ভুত কিছু দেখেছো কিনা।
--ডোম তাকিয়ে বলে স্যার চার বছর আগের কথা আমার অত টা মনে নেই।তবে হ্যাঁ একটা ভয়ংকর ঘটানা ঘটেছিলো।
এর ই মাঝে বাচ্চাটা গম্ভীর কন্ঠে বলে ওঠে মায়া চারদিকে শুধু মায়া।
--তাসনিম চমকে যায় কথাটা শুনে।মায়ের গর্ভে থাকা একটা বাচ্চা কথা বলছে তার নাম মায়া।
--মায়া নাম টার সাথে যেনো কত মায়া জড়িয়ে আছে।
পর্ব ৩
---মর্গে এক মৃত ডেড বডি নিয়ে আতঙ্কিত সবাই।এই লাশ টা নিয়ে বিভিন্ন রহস্য বেরিয়ে আসছে।এতদিনের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ডাক্তার তাসনিম, মৃদুল দুজন ই আতঙ্কিত।
----এই দিকে লাশটির পেটের বাঁচ্চা ভয়ানক ভাবে কথা ও বলছে।তাসনিম ঘামতে শুরু করেছে।তাসনিম প্রায় অসুস্থ হয়ে পড়েছে।কারো কানে না গেলেও বাঁচ্চাটির আওয়াজ তাসনিম এর কানে ঠিক ই পৌছাচ্ছে।আমি মায়া আমাকে বাইরে বের করো।
-----তাসনিম এর এমন অবস্থা দেখে তাসনিম এর বাবা আর তাসনিমের স্বামিকে খবর দেওয়া হয়।তাছাড়া হসপিটালের মালিক তাসনিমের বাবা তাই এমন ভয়ানক ঘটনা তাদের জানানো একান্ত জরুরি।
----আবরার এবং তাসনিমের বাবা খবর পেয়ে মর্গে প্রবেশ করে।তাসনিম এর এমন অবস্থা দেখে আবরার তাসনিম কে জড়িয়ে ধরে বলে একজন ডাক্তার হয়ে এভাবে ভেঙে পড়েছো ক্যানো শুনি।মর্গে অনেক অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে থাকে।এগুলা কোনো ব্যাপার নাহ পাগলি।আমাদের জীবন জড়িয়ে আছে মানুষ জীবীত মৃত লাশের সাথে।এতটা ভয় পেলে চলবে।তাহলে জুনিয়র রা কি শিখবে।
তাসনিমের বাবা বলে কোথায় সে লাশ দেখাও তো।কি এমন হয়েছে লাশ নিয়ে।
তাসনিম বলে বাবা,ওই লাশ টা দেখো যার সিরিয়াল নাম্বার ১০৩.
লাশের শরীর থেকে সাদা কাপর টা বাতাসে এমনি উড়ে গিয়ে তাসনিমের বাবার মুখের উপর পড়লো। তাসনিমের বাবা লাশের দিকে তাকিয়ে ভীষণ ভাবে চমকে যায় একি অপর্ণা।তুমি এখানে।আবরার ও এখানে কিভাবে এলো।আবরার তাকিয়ে দেখে আবরার ও চমকে যায়।আবরার বলে বাবা কোন অপর্ণা।তাসনিমের বাবা বলে আবরার তাকিয়ে দেখো সেই মেয়েটা।আবরার তাকিয়ে দেখে চমকে যায় বাবা এ তো সেই মেয়েটা যার নাম অপর্ণা ছিলো।
মৃদুল বলে আবরার স্যার উনি কোন অপর্ণা আর আপনারা কার কথা বলছেন।
তাসনিমের বাবা ঘেমে গেছেন চোখে মুখে ভয়ের তান্ডব তার।
তাসনিম বলে বাবা ওর নাম অপর্ণা তুমি সিওর হলে কিভাবে।
তাসনিমের বাবা বলে কারণ আবরার আর আমি নিজ হাতে অপারেশন করেছিলাম মেয়েটি কে।
তাসনিম বলে,, বাবা তোমরা অপারেশন করেছিলে সাত দিন আগে।
তাসনিমের বাবা বলে না আমরা এর অপারেশন আরো চার বছর আগে করেছিলাম।এই ডোম ই এর লাশ কেটেছিলো।
ডোম এগিয়ে এসে বলে স্যার ও আমাকে মেরে ফেলবে।আমি যাকে কেটেছিলাম সে মানুষ ছিলোনা।আমার জীবনে ওই একটা লাশ কাটতে গিয়ে আমি ভয়ংকর পরিসস্হিতিতে পড়েছিলাম।
তাসনিম বলে কেনো?
তখন ডোম বলে,,
সেদিন ও এমন একটি রাত ছিলো।চারদিক অন্ধকার আপনার বাবা আর আবরার স্যার লাশটিকে মর্গে এনে রেখে আমাকে কাটতে বলেছিলেন।লাশ টা কাটার সময় দেখি তার পাশে পাঁচ বছরের একটি মেয়ে সুয়ে আছে।আমি ভীষণ চমকে যায় লাশ কাটা ঘরে এমন একটা মেয়ে দেখে।আমি হটাত খেয়াল করি লাশ টা হাত নাড়াচাড়া আমাকে বলছে প্লিজ হেল্প মি!আমাকে কাটবেন না।আমি জীবীত আছি এখনো।দেখুন আর পালস চলছে।আমি মরি নি।প্লিজ ডাক্তার দের বলুন আমাকে বাঁচাতে।আমি তখন প্রশ্ন করি আপনার নাম কি।উনি উত্তর দেন আমার নাম অপর্ণা মায়া।আমি আপনার বাবা কে ফোন দেই।আপনার বাবা সমস্ত রকম টেস্ট করে দেখেন উনি জীবীত নেই।আপনার বাবা চলে গেলেই উনি আবার জেগে উঠছিলেন।একটা সময় বিরক্ত হয়ে আমি মদ্যপান করে উনার লাশ কাটা শুরু করি।সাথে সাথে ৫ বছরের একটা বাচ্চা দেখি হাওয়ায় ভাষছে।বাচ্চাটা একভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।বাচ্চাটা যখন আমার গলায় ছুরি ধরেছিলো ঠিক তখন ই এই অপর্ণা আমাকে বাঁচায় আর বলে মায়া এখন না আমরা আবার ফিরে আসবো এই মর্গে।
--মৃদুল বলে উনার নাম কি।
--তাসনিমের বাবা বলে মায়ার আম্মু
--মানে
---উনার কাছে নাম জানতে চাইলে বলেছিলেন আমার নাম মায়ার আম্মু।
---উনার নিজের নাম নেই
--অপর্না মায়া
---ভারী কঠিন নাম তো
আবরার বলে অপারেশন থিয়টারেই অনেক ভয়ানক ঘটনা ঘটেছিলো।কিন্তু চার বছর আগের লাশ আজ ও পঁচে নি রক্তচলাচল করছে কিভাবে।আবার উনার বেবি ও এখন ডেলিভারি হবে।এটা কিভাবে সম্ভব।
মৃদুল বলে স্যার উনি কিছুক্ষণ আগেও আমার কাছে এসে ট্রিটমেন্ট নিয়েছ।
আবরার ভীষণ চমকে যায় কথাটা শুনে।
লাশ টিকে ডেকে রাখা হয়েছে সাফা কাপড় দিয়ে।হঠাত রুমের লাইট অফ অন হচ্ছিলো।নিকশ কালো অন্ধকার মর্গে কোথাও কিছু দেখা যাচ্ছে না হঠাত তাসনিম খেয়াল করে লাশ টা উঠে বসে আছে আর এক ভাবে তাসনিমের দিকে তাকিয়ে আছে।অন্ধকার রুমে শুধু দেখা যাচ্ছে সাদা কাপড়ে মোড়ানো কিছু একটা দেখা যাচ্ছে।
পর্ব ৪
অপর্ণা মায়া লাশটিকে ঘিরে জড়িয়ে আছে সবার আতংক।কেননা লাশটির সাথে কাকতালীয় ভাবে সবার ই কিছু না কিছু ঘটনা ঘটে গিয়েছে।একক ভাবে কেউ জড়িত নয়।আবার সবার সাথেই জড়িত।
তাসনিমের বাবা ডোম কে হুকুম করে লাশটিকে পুনঃরায় যেনো কাটা হয়।তাসনিমের বাবা মাথা ঠান্ডা করে বলেন এ সে না আবরার।ভেবে দেখো চার বছর আগের সে কিভাবে ফিরে আসবে।ক্ষণিকের জন্য কেমন চমকে গিয়েছিলায়াম দেখো।তোমাদের এসব উদ্ভট কথার জন্য আমিও কেমন ভুল ভাল ভাবছিলাম।
তোমরা কি পাগল মেডিকেল সায়েন্স এসব আত্মা বলে কিছুই বিশ্বাস করে না।মানুষের মতো দেখতে হুবহু অনেক মানুষ হয়ে থাকে।
আবরার মানে তাসনিমের স্বামি বলে বাবা আপনি একটু খেয়াল করে দেখুন এর হাতেও সেইম ট্যাটু।আপনি ভুলে গিয়েছেন অপারেশন এর সময় কি ভয়ানক কান্ড ঘটেছিলো।
তাসনিমের বাবা বলে আবরার পাস্ট ইস পাস্ট ভুলে যাও সেই অতীত।আমাদের মতো সিনিয়র ডাক্তার দের মুখে এসব শুনলে জুনিয়র রা কি ভাববে।তাসনিমের বাবা ফিসফিস করে কথা গুলো আবরার কে বলছিলো।
মৃদুল বলে স্যার আমার ও এমন টাই লাগে কারণ বিগত দশ মাস আমার কাছে চিকিৎসা নিচ্ছেন উনি।আমি উনাকে খুব ভাল ভাবেই চিনি।
তাসনিমের বাবা ডোম কে বলে, তুমি আরেক বার এর পোস্ট মর্টেম করো।এ মৃত এটা সিওর।অনেক সময় কিছু মৃত মানুষের রক্ত অনেক সময় স্বচল থাকে।তাছাড়া এর বেবি ও জীবীত নেই।এটা তোমদের নিছক ই ভুল অনুমান।
ডোম বলে স্যার অদ্ভুত ব্যাপার আমি ছাড়া এ হসপিটালে তো কেউ লাশ কাটে না।কিন্তু উনাকে কে কেটেছেন।এখানে কি নতুন কেউ চাকরি নিয়েছেন।আবরার বলে হয়তো অন্য কোনো ডাক্তার বাইরে থেকে কাউকে এনে এনার পোস্ট মর্টেম করিয়েছেন তুমি ছিলে না তাই।
ডোম লাশ টির কপালের এক সাইড থেকে আরেক সাইড কাটে সাথে সাথে টলটলে তাজা রক্ত গড়িয়ে পড়ে।সেই সাথে লাশটির প্রসব বেদনা তীব্র আকারে শুরু হয়।মানে একটা মহিলার বাচ্চা ডেলিভারির সময় যেমন অবস্থা হয় ঠিক তেমন।
অদ্ভুত ব্যাপার মহিলাটির পেট থেকে মাথা পর্যন্ত ডেড বডির মতোই পড়ে আছে কিন্তু পেটের নিচ থেকে দেখে মনে হচ্ছে সে জীবীত।ডোম ভয়ে ছুরি দূরে ছুড়ে ফেলে বলে স্যার আমি জীবীত মানুষ কাটতে পারবো না।এ জীবীত।স্যার এই সে যাকে চার বছর আগে কেটেছিলাম।স্যার এর পেট দেখুন তার পেটেও এমন অদ্ভুত কিছু ছিলো।স্যার ও মানুষ না।মানুষ হতে পারে না।
এরই মাঝে তাসনিম মাথা ঘুরে পড়ে যায়।তাসনিম কে অসুস্থ হতে দেখে তাসনিমের বাবা বলেন আজকের মতো লাশ টাকে ফ্রজেন করে রাখো। আগামিকাল আমরা আবার দেখবো। এ নিয়ে কাউকে কিছু বলার দরকার নেই।
পরের দিন খুব দুঃচিন্তায় আছে তাসনিম।তার মন বলছে ওই লাশের মাঝে কিছু উল্টা পাল্টা আছে।ওই বাচ্চার কাঁন্না ভুল হতে পারে না।
পরের দিন মৃদুল আবার তার চেম্বারে রুগি দেখছে।মৃদুল একজন গাইনি ডাক্তার।হঠাত মৃদুল এর কাছে সেই রুগি টা ও আসে যাকে নিয়ে গতকাল রাতে এত কিছু ঘটে গেছে।মৃদুল মহিলাটিকে দেখে কেঁপে উঠে বলে একি আপনি।মহিলাটি বলে স্যার আমার শরীর টা খুব খারাপ লাগছে।কেনো যেনো মনে হচ্ছে আমি আর বাঁচবো না।আমি মারা গেলে আমার বাঁচ্চার কি হবে স্যার।
মৃদুল এর গলা শুকিয়ে আসছে একটা মৃত মানুষ তার সামমে বসে আছে।মৃদুল স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে গতকালের সেই মহিলা টিই ইনি।
টেনশনে মৃদুল এর প্রেসার বেড়ে গিয়েছে।হৃদপিন্ড থর থর করে কাঁপছে।মহিলাটি মৃদুল কে বলছে স্যার আপনি আমাকে প্লিজ হেল্প করুণ।আমার বেবির দায়িত্ব নিবেন স্যার।মৃদুল যেনো ভয়ে অবশ হয়ে যাচ্ছে।কি বলবে বুঝছে না।
মহিলাটি মৃদুল কে বলে স্যার আমার স্বামির ঠিকানা দিচ্ছি আমার বেবিকে ওর বাবার ঠিকানায় পৌছে দিন প্লিজ।বলেই মহিলাটি একটা খাম দেন মৃদুলের হাতে।মহিলাটি মৃদুল এর রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো।মৃদুল খাম টি খুলে দেখে একটা ছবির পেছনে একটি ঠিকানা লেখা আছে।ঠিকানা টা শহর ছেড়ে বেশ কয়েক টা গ্রাম পেরিয়ে একটি গ্রাম হবে।মৃদুল পরে ছবিটি উল্টিয়ে দেখে একটা নিখুট সুন্দর ফুটফুটে বাচ্চার ছবি।মৃদুল মহিলা টিকে আবার ডাক দেই। মহিলা টা মৃদুল এর রুমে এসে বলে আমাকে আবার ডাকলেন স্যার কিছু বলবেন।
মৃদুল বলে, বলছি এই বাচ্চা মেয়েটি কে?
মহিলা টি বলে কোন বাচ্চা।
মৃদুল এই ছবির বাচ্চা
মহিলাটি বলে আমি চিনিনা, ঠিকানা লেখার জন্য একটা কাগজ প্রয়োজন রাস্তায় এই ছবিটি পেলাম আর তার পেছনে ঠিকানা টি লিখলাম।
হঠাত মৃদুল খেয়াল করে মহিলাটির হাতে একটি ট্যাটু।ট্যাটু টি দেখে ভীষণ ভাবে চমকে যায় মৃদুল।ট্যাটু করে লেখা আছে "মায়া"মৃদুলের হাত পা কাঁপতে থাকে মায়া নাম টা দেখে।কারণ গত কাল রাতে এই মায়া নাম টা নিয়ে অনেক কিছু হয়ে গিয়েছে।মহিলা টা বেরিয়ে কোথায় হাওয়া হয়ে গিয়েছে মৃদুল সেটা জানে না।
তাসনিম খুব অস্বাভাবিক হয়ে পড়েছে।সন্ধ্যায় সুয়ে আছে তাসনিম।কেমন যেনো মনে হচ্ছে একটা নূপূরের শব্দ তার কানে ভেষে আসছে।তাসনিম দরজা থেকে উঁকি মেরে দেখে একটা বাচ্চার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে কেউ।মেয়েটির পায়ে একটা কাগজে একটা নাম্বার লেখা।তাসনিম দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে দেখে কেউ নেই শুধু পড়ে আছে একটা সিরিয়াল নম্বর। যেটা দেখে স্পষ্ট ক্লিয়ার তাসনিম এটা কোনো লাশ সনাক্ত করণ নাম্বার।
চলবে,,,
© bnbooks.blogspot.com